শিক্ষার্থীদের হাতে ঈদের আগে সব বই পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না
বাজারে গাইড বইয়ের ছড়াছড়ি
গতকাল সরেজমিন রাজধানীর নীলক্ষেত, বাংলাবাজার ও মিরপুর-১০ নম্বর বই বাজারে ঘুরে দেখা যায়, দোকানে দোকানে গাইড বই বিক্রি হচ্ছে। এনসিটিবির ওপর আস্থা হারিয়ে অনেক অভিভাবক চড়া দামে গাইড বই ও পাঠ্যবই ক্রয় করছেন। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে না পৌঁছায় গাইড বই বিক্রি বেশি হচ্ছে। গাইড বইয়ের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়ে শিক্ষাবিদরা বলেন, গাইড বইয়ের কারণে মুখস্থ নির্ভরতা বাড়াচ্ছে। মেধার বিকাশ হচ্ছে না।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে এবার মোট শিক্ষার্থী ৪ কোটি ৩৪ লাখ ৩ হাজার ২৮৩ জন। ৪০ কোটি, ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২টি বই প্রয়োজন। তবে গতকাল পর্যন্ত প্রায় ২২ কোটি পাঠ্যবই ছাপানো ও সরবরাহ করা হয়েছে বলে এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে। এখনো ১৮ কোটি ১৫ লাখ পাঠ্যবই ছাপানো প্রয়োজন। এখনো সব শিক্ষার্থী পাঠ্যবই পায়নি। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী পেয়েছে আংশিক বই। কাগজ সংকট না থাকলে দিনে ৪০ লাখ পাঠ্যবই ছাপানোর সক্ষমতা রয়েছে দেশের ১১৬টি ছাপাখানার। কিন্তু গত দুই মাস ধরে কাগজের কৃত্রিম সংকট চলছে। প্রতি টন কাগজের মূল্যও বাড়ানো হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এ কারণে বই ছাপাতে দেরি হচ্ছে। ছাপাখানার মালিকরা বলেন, গত দুই মাস ধরে প্রতি দিনই ২০ লাখ কপি কম ছাপাতে হচ্ছে কাগজ সংকটের কারণে। এ কারণে ঈদের আগে সব বই ছাপানো হয়তো সম্ভব হবে না। রাজধানীর নীলক্ষেত ও বাংলাবাজারে মাধ্যমিকের প্রতিটি শ্রেণির পাঠ্যবই সেট ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রাথমিকের প্রতিটি শ্রেণির পাঠ্যবই সেট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা। নীলক্ষেতে পাঠ্যবই কিনতে আসা আরিফুর রহমান বলেন, তার মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। বই এখনো মেলেনি। এদিকে স্কুলে ক্লাস ও প্রাইভেট শুরু হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে গাইড বই কেনেন তিনি। পঞ্চম শ্রেণির একের ভেতর সব গাইড বইয়ের দাম রাখা হচ্ছে ৭৩০ থেকে ৮০০ টাকা। এগুলো আলাদা আলাদাভাবে কিনলে লাগছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা।
সরকারের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নোট-গাইড বই ছাপা বন্ধে আরও কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। নিষিদ্ধ এসব বই ছাপা বন্ধ করতে এবার ডিসিদের ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। গত জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা জেলা প্রশাসককে পাঠানো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির নতুন পাঠ্যবই ছাপা পুরো জানুয়ারি জুড়ে চলবে। এ সময়ে ৪০ কোটি পাঠ্যবই ছাপার কাজে নিযুক্ত প্রেসসমূহে যেন নোট ও গাইড বই, ডায়েরি, ক্যালেন্ডার ইত্যাদি ছাপতে না পারে তা নিশ্চিত করতে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য বলা হলো। চিঠিতে ঢাকা জেলা প্রশাসককে ১১৬টি প্রেসের ঠিকানাও দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েক জন জেলা প্রশাসককে একই চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম ও সমমান শ্রেণির বিনা মূল্যের পাঠ্যবই ছাপা হয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানোর আগে সব ধরনের সহায়ক বই বা নোট-গাইড ছাপা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় এনসিটিবি।